একতাই শক্তি, সবার জন্য একটি শিক্ষামূলক গল্প
একতাই শক্তি, সবার জন্য একটি শিক্ষামূলক গল্প রয়েছে আজকে। দলবদ্ধভাবে কোনো কাজ করলে সফলতা সহজে আসে। আপনি একা কোন শ্রমসাধ্য কাজ করতে পারবেন না। কিন্তু সেই কাজটা পুরোপুরি করতে পারেন। আমরা সবাই ঐক্য জানি। গ্রুপে কাজ করে সফল হতে পারেন। যে জাতি যত বেশি সুশৃঙ্খল, সে জাতি তত বেশি উন্নত। কারণ বেঁচে থাকার জন্য যেকোনো দেশকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে, নিজেদের মধ্যে ঝগড়া থাকলে কখনোই সফল হবেন না।আজ আমরা এমন একটি গল্প সম্পর্কে জানবো। সেই গল্পের মাধ্যমে আমরা দলবদ্ধ হয়ে কাজ করতে শিখব।
এক গ্রামে একজন সৎ লোক ছিল। গ্রামের সব মানুষকে তিনি খুব ভালোবাসতেন। গ্রামের মানুষ তাকে সেভাবে শ্রদ্ধা করত। গ্রামের সকল মানুষের সাথে তার সুসম্পর্ক ছিল। লোকটির পাঁচটি ছেলে ছিল। তার ছেলেরা সবাই সুস্থ ছিল। তার ছেলেরা যেকোনো কাজ দ্রুত করতে পারত। গ্রামের সবাই তার এক ছেলেকে পছন্দ করত। তবে লোকটির এখন বয়স হয়েছে। সে নিজে থেকে চলতে পারে না। নানা অসুখে তার শরীর খারাপ হয়ে গেছে। এই বৃদ্ধ মানুষটি সারাক্ষণ বিছানায় শুয়ে থাকেন।
হঠাৎ, তিনি ভাবলেন যে তার ছেলেরা একসাথে থাকবে কিনা। তিনি ভাবছিলেন যে তার ছেলেরা তাকে ছাড়া একটি দল হিসাবে একসাথে কাজ করবে কিনা। তার অনুপস্থিতিতে তাদের সংশোধন করার কেউ থাকবে না। ছেলেদের অভিভাবক হওয়ার মতো কেউ থাকবে না কারণ এই বয়স্ক লোকটি এই ছেলেদের একমাত্র অভিভাবক ছিল। এসব ভাবতে ভাবতে তার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল।
আরও পড়ুন: >> বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রচনা
বাবার চোখে জল দেখে তার ছেলেরা তাকে জিজ্ঞেস করলো সে কেন কাঁদছে? আমরা কি তোমার কোন ক্ষতি করেছি? আমরা কি আপনার সাথে কিছু ভুল করেছি? এই কারণে আপনি কাঁদছেন, এবং এই প্রশ্নগুলি ছেলেরা জিজ্ঞাসা করছে। আমরা আপনাকে আঘাত করলে আমাদের শাস্তি দিন। অথবা অন্য কেউ আপনাকে আঘাত করে থাকলে আমাদের বলুন।
বাবা হেসে ছেলেদের বললেন, আমি জানি তোমরা আমাকে খুব ভালোবাসো। তোমার মতো ছেলে পেয়ে আমি গর্বিত। আমার কথা ভাববেন না। এবার নিজের কথা ভাবুন। কারণ আমি যখন থাকব না, তখন কেউ তোমাকে দেখতে পাবে না। তাই এখন থেকে স্বাবলম্বী হতে হবে। বয়স্ক লোকটি বলল আমি আপনাকে এইবার একটু কাজ করতে বলব। তুমি কি আমার এই ক্ষুদ্রাকৃতির কাজটি করবে? ছেলেরা উত্তর দিল, “হ্যাঁ, বাবা, আমরা আপনার কথা শুনব।”
বৃদ্ধ বললেন, পাঁচটা পাটের কাঠি নিয়ে এসো। বাবার কথা শুনে ছেলেরা পাঁচটা পাটের লাঠি নিয়ে এল। বৃদ্ধ বললেন এই পাঁচটা পাটের কাঠি এনে ভালো করে বেঁধে দিতে। বড় ছেলে এবার একটা দড়ি পেয়ে পাটের কাঠিগুলো বেঁধে দিল।এবার বাবা তার ছেলেকে এই গিঁট ভাঙার নির্দেশ দিলেন।
বড় ছেলে ভাবলো কিভাবে সে একসাথে এতগুলো পাটের কাঠি ভাঙতে পারে। বৃদ্ধ লোকটি বললো, “বাবা, একবার চেষ্টা করে দেখো ভাঙতে পারো কিনা।” বাবার কথা শুনে বড় ছেলে পাটের কাঠি ভাঙার চেষ্টা করে। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই তিনি একসঙ্গে এতগুলো পাটকাঠি ভাঙতে পারেননি।
এবার মেজো ছেলে পাটের লাঠি ভাঙার চেষ্টা করে। কিন্তু মেজোর ছেলে পাটকাঠি ভাঙতে পারেনি। এভাবে পাটের কাঠি ভাঙার চেষ্টা করে বড়লোকের পাঁচ ছেলে। কিন্তু কোনো ছেলেই একসঙ্গে পাটের কাঠি ভাঙতে পারেনি। এবার তাদের বাবা পাট খুলতে বললেন। তারপর প্রতিটি ছেলেকে একটি করে পাটের কাঠি দিলেন। তিনি পাটের লাঠি দিয়ে সবাইকে বললেন ভাঙার চেষ্টা করতে
এবার সবার হাতে পাটের লাঠি ভাঙল ছেলেরা। কারণ ছেলেদের হাতে একটাই পাটের লাঠি ছিল। তাই পাটের কাঠি ভাঙা যে কোনো ছেলের পক্ষেই সহজ ছিল। কিন্তু তার আগে তাদের একসঙ্গে পাঁচটি পাটের কাঠি ছিল। তাই একসঙ্গে পাঁচটি কাটা কেউ মরতে পারেনি।
বৃদ্ধ লোকটি আবার তাদের বললেন, “তোমরা দেখেছ একটা পাটের কাঠি সহজেই ভেঙে ফেলেছ।” কিন্তু আপনারা কেউ একবারে পাঁচটি পাটের কাঠি ভাঙতে পারেননি। তোমার পাঁচ ভাই থাকলে কেউ তোমার ক্ষতি করবে না। আর যদি তোমরা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া কর, তবে যে তোমাদের ক্ষতি করতে পারে। তুমি আলাদা হলে পাটের কাঠির মত ভেঙ্গে যাবে। তাই এটা সাহায্য করবে যদি আপনি সবসময় ঐক্যবদ্ধ থাকেন। যতক্ষণ তুমি ঐক্যবদ্ধ থাকবে, ততক্ষণ কেউ তোমার ক্ষতি করতে পারবে না। আর এই শিক্ষা দিতে বলেছি পাটের কাঠি ভাঙতে।
এবার বড়লোকের ছেলেরা সবাই বলল আমাদের কেউ ক্ষতি করতে পারবে না। আমাদের পাঁচ ভাই সবসময় একসাথে থাকবে। কখনোই আমাদের একে অপরের থেকে আলাদা করবে না। কারণ আমরা বুঝি একসাথে থাকলে কারো ক্ষতি হবে না। কারণ আমরা একা কোনো শত্রুকে মোকাবেলা করতে পারি না। আমরা পাঁচ ভাই একসাথে থাকলে যে কারো সাথে লেনদেন করতে পারি।
বন্ধুরা, আজকের গল্প থেকে আমরা শিখেছি যে “ঐক্যের শক্তি” যতক্ষণ আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব, কেউ আমাদের ক্ষতি করতে পারবে না। এ ছাড়া যেকোনো কাজ একসঙ্গে করলে সফল হওয়া যায়। তাই বিপদের সময় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে যেকোনো শত্রুকে মোকাবেলা করতে হবে। আমরা যত বেশি ঐক্যবদ্ধ হব, কাজগুলি করা তত সহজ হবে।