পদ্মা সেতু ও সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ রচনা
প্রিয় পাঠক সাহেব ধন্যবাদ জানাই আপনার অনুসন্ধানের জন্য এবং আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করার জন্য। আপনি যদি ইতিমধ্যে অনলাইনে এসে অনুসন্ধান করে থাকেন পদ্মা সেতু ও সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ রচনা তবে এ সম্পর্কিত সঠিক জানান জন্য সঠিক জায়গায় এসেছেন। চলুন তবে শুরু করা যাক।
Article Intro
ভূমিকা
বাংলাদেশের অন্যতম দীর্ঘতম নদী পদ্মার উপর নির্মিত সেতুই পদ্মা সেতু নামে পরিচিত হচ্ছে। এটি একটি বহুমুখী সেতু। অর্থাৎ এখানে সড়ক ও রেল উভয়ই থাকবে৷ পন্মা নদীর উপর নির্মিত এই সেতুটি বাংলাদেশের পদ্মা নদী সংলগ্ন মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয় ও শরীয়তপুর এবং মাদারীপুর জেলাকে সংযুক্ত করা হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত সেতুটি বাঙালি জাতীর জন্যে গৌরব ও বিস্ময়ের।
পদ্মা সেতু ছিলো একটি স্বপ্ন
বাংলাদেশের বৃহত্তম বরিশাল জেলাকে একত্রিত করার লক্ষ্যে উক্ত সেতু প্রকল্পের স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ। যার ফলে একটি বিশাল এলাকার সাথে মূল ভূখন্ডের মিলন ঘটবে। কিন্তু এই বিশাল প্রকল্পের জন্যে অর্থ সহযোগীতা দেয়ার কথা ছিল বিশ্ব ব্যাংকের। যা দুর্নীতির দায়ে বাতিল করা হয়। তাই বাংলাদেশ সরকার জনগণের টাকায় এই প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করে। এবং দীর্ঘ যাত্রা শেষে ২০২০ এ এসে এই স্বপ্ন সম্পূর্ণ হয়। পদ্মা যেহেতু বাঙালির নিজের অর্থায়নে নির্মিত সেতু তাই বরাবরই এটি তাদের গর্বের ও স্বপ্নের ব্যাপার। কারণ এর পূর্বে এত বড় মাপের প্রকল্প একা করা সম্ভব হয়নি।
প্রিয় পাঠক পদ্মা সেতু ও সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ রচনা নিয়ে এই আর্টিকেলটি তৈরি। আমরা শ্রেষ্ঠা করেছি এই ট্রেন্ডিং টপিকরে উপর মানানসই কিছু পয়েন্ট দিয়ে সুন্দরভাবে সাজানোর। তবে আপনি চাইলে কিছু টপিক পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করে ও নিজের মতো সাজাতে পারেন। চলুন বাকী অংশ পড়ে নেওয়া যাক।
আরো পড়ুন: স্বপ্নের পদ্মা সেতু সম্পর্কে ১০টি বাক্য
দৈর্ঘ্য, উচ্চতা ও অন্যান্য তথ্য
দুই স্তর বিশিষ্ট কংক্রিট ও স্টিল দ্বারা নির্মিত এই সেতুর উপরের স্তরে রয়েছে চার লেনের সড়ক পথ। পদ্মার নিচের স্তরে অবস্থিত রেলপথ। মোট ৪২টি পিলার,১৫০ মিটার দৈর্ঘ্য, ৪১ টি স্প্যানের মাধ্যমে পুরো অবকাঠামোটি গড়ে তোলা হয়েছে। পদ্মা-মেঘনা-ব্রক্ষপুত্র নদীর অববাহিকায় এটি নির্মাণ করা হয়েছে। তাই নির্মাণে রয়েছিলো যথেষ্ট চ্যালেঞ্জ। পদ্মা মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৬.১৫০ কিলোমিটার। এবং প্রস্থ ১৮.১০ মিটার। পদ্মা সেতু তৈরিতে কাজ করেছে দেশ বিদেশের মোট ২৭ জন প্রকৌশলী ও প্রায় তেরো হাজার শ্রমিক।
নির্মাণের পথে বাঁধা ও সক্ষমতার প্রমাণ
নানা সময়ে এই বিশাল পদ্মা সেতু প্রকল্পে নানা বাধা এসেছে। এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সব চেয়ে বড় প্রকল্প। ২০১২ সালে বিশ্বব্যাংকের সাথে ১২০ কোটি ডলাররের ঋণ চুক্তি যখন ব্যর্থ হয়। চুক্তিটি করা হয়েছিলো ২০০৯ সালে। চুক্তি বাতিল হওয়াতে আকাশ ভেঙে পড়ে বাঙালির স্বপ্নের প্রকল্পের উপর। তাই সৃষ্টি হয় সেতু না হওয়ার মত বিশাল অনিশ্চিয়তা। তারপরও নিজেদের অর্থায়নে নির্মাণ হয় সেতুটি। যা উদ্ভোদনের সম্ভব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয় ২৫ জুন ২০২২।
নির্মাণে বাজেট
সাল ২০০৭ তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার পদ্মা সেতুর প্রকল্প পাস করে। কিন্তু পরবর্তীতে ২০১১ সালে সেতুটির সংশোধিত ব্যয় ধরা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। আবার ২০১৬ সালে সংশোধন করা হয় এর সম্ভব্য ব্যয়। এবার ধরা হয় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। যদিও শুরুর দিকে বিশ্বের নামি-দামি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সাথে যৌথ উদ্যোগে নির্মাণের কথা ছিল। কিন্তু ২০১২ সালে বিশ্বব্যাংক অনিহা দেখালে বাংলাদেশ নিজেদের টাকায় এই সেতু করার সিদ্ধান্ত নেয়। অত:পর শত কূটচাল ও বাঁধার মুখে নির্মাণ হয় সেতুটি।
পড়ার মাঝে আরও একটু থামাচ্ছি আপনাকে। এই পদ্মা সেতু ও সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ রচনা সম্পর্কিত আর্টিকেলটিতে বর্তমান সময়ের অনেকগুলো জ্ঞানমূলক প্রশ্নের সন্নিবেশ করা হয়েছে। সময়ের উপর ডিপেন্ড করে কিছু তথ্যের মিল অমিল থাকতে ও পারে। কোনো তথ্যের ভূল বা অসংগতি মনে হলে অবশ্যই ওয়েব রিচার্স করে সঠিকটা জেনে নিবেন এবং কমেন্ট করে আমাদেরকে অবিহিত করার অনুরোধ রইলো।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব (শিল্প) (কৃষি)(দারিদ্র্য)(বিমোচন)
দেশের বৃহত্তম অঞ্চলকে একত্রিত করেছে পদ্মা সেতু। তাই এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব সুদূরপ্রসারী। এটি তার কার্যক্রম শুরু করলে দেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলা সংযুক্ত হবে সারা দেশের সাথে। এর ফলে জীবন বদলে যাবে এই এলাকার মানুষের। কারণ এত দিন তারা রাজধানীতে আসতে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন হতো। কিন্তু পদ্মা সেতুর ফলে এই সময় আর লাগবে না। ফলে যোগাযোগ হবে দ্রুত। গতিশীল হবে অর্থনীতি। এছাড়াও আরো যে সকল অর্থনৈতিক গুরুত্ব বহন করে পদ্মা সেতু। তা হলোঃ
(ক) শিল্প খাতে
যেহেতু এই সেতু উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল কে একত্রিত করবে তাই নতুন শিল্পখাতের উদ্ভব হবে। দুই অঞ্চলের শিল্প পণ্য বিনিময় হবে। ব্যবসায়ীক সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। ঘুরে যাবে শিল্পের গতি। স্থাপিত হবে নতুন পর্যটন শিল্প,গড়ে উঠবে নতুন শিল্প।
(খ) কৃষিখাত
কথিত দক্ষিণ অঞ্চলে উৎপাদিত কৃষি পণ্য ও কাচামাল আনা নেয়াতে এত দিন যথেষ্ট খরচের প্রয়োজন হতো। প্রয়োজন হতো দীর্ঘ সময়ের। কিন্তু পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে পণ্য আনা নেয়ার কাজ দ্রুত সময়ে করা যাবে। এর ফলে ন্যায্য মূল্য নির্ধারিত হবে, কৃষকের উন্নতি হবে। বিকাশ ঘটবে কৃষি খাতের। এছাড়া উন্নত মানের কৃষি প্রযুক্তি বিনিময়ের মাধ্যমে এগিয়ে যাবে কৃষি।
(গ) দারিদ্র্য বিমােচনে পদ্মা সেতুর প্রভাব
পদ্মা সেতুর ফলে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের দারিদ্র্য লাগব হবে। কারণ সেতুর ফলে দ্রুত যোগাযোগ স্থাপিত হলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। নতুন শীল্প স্থাপনের ফলে কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হবে। এছাড়াও কাজের জন্যে বেকার শ্রম শক্তি আদান প্রদান ঘটবে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সাথে। এতে দারিদ্র্য বিমোচিত হবে এবং বেকারত্বের সমাধান হবে।
ইতিবাচক প্রভাব
ইতিপূর্বে আমরা পদ্মা সেতুর নানা সুফল গুলো আলোচনা করেছি। পদ্মা সেতু দেশের বিছিন্ন অঞ্চলকে একসাথে করবে। বদলে দিবে পদ্মার দু’কূলের মানুষের জীবনযাত্রা। এছাড়াও বরিশাল অঞ্চলের বিপুল শিল্প স্থাপনের চাহিদার ফলে বিদেশী বিনিয়োগও বৃদ্ধি পাবে আশা করা যাচ্ছে। পর্যটন খাতে এই সেতু সহায়ক ভূমিকা রাখবে। কারণ দ্রুততম সময়ে রাজধানী ঢাকা হতে যাওয়া যাবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে।
পাঠক সাহেব! অত্র পদ্মা সেতু ও সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ রচনা নামক এই আর্টিকেল পড়া শেষ হলে অবশ্যই আপনার অনুভূতি আমাদেরকে কমেন্ট বক্সে জানিয়ে যাওয়ার শ্রেষ্ঠা করবেন। এতে করে আমরা আরও লিখতে অনুপ্রাণিত হবো।
নেতিবাচক প্রভাব
পদ্মা সেতুর ফলে পূর্বের লঞ্চ, জাহাজ ব্যবসায়ী সহ কূলী, মজুর ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতি হবে। সেতুর ফলে আগের মত নৌপথে যাতায়াত থাকবে না তাই দুই পারারে অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বে। কিন্তু এই সরকার যদি এদের প্রতি সদয় হয়ে এদের পূণর্বাসনের ব্যবস্থা করে তাহলে এই সমস্যার সমাধান পাওয়া সম্ভব। এ সমস্যাটি ছাড়া পদ্মা সেতু বিপুল সম্ভাবনার বাহক।
পরিবেশের উপর প্রভাব
পদ্মা সেতু নির্মাণকালে নদীর দুই পাড়ে সড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে নদীর দু’কূল বাঁধ দেয়া হয়েছে। এর ফলে নদী ভাঙন রোধ পেয়েছে। এছাড়াও এই সড়কের দুই পাশে গাছ রোপন করা হয়েছে যার ফলে দুই কূলের পরিবেশ সবুজায়ন হচ্ছে। অন্যদিকে এত দিন দক্ষণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ জ্বালানি হিসাবে কাঠ ব্যবহার করতো যার ফলে ব্যাপক বৃক্ষ নিধন হতো। কিন্তু সেতুর ফলে এখন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবারহের ব্যবস্থা হয়েছে বলে গাছ কাটার উপর চাপ কমবে।যার ফলে এই অঞ্চলের পরিবেশ রক্ষা পাবে।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায় পদ্মা বাঙালির অন্যতম অর্জন। কষ্টের টাকায় দীর্ঘ অপেক্ষার ফলাফল। যা দেশের অর্থনীতিতে সূদূর প্রসারি প্রভাব রেখে বদলে দিবে হাজারো মানুষের জীবন।