ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। আশা করি আপনি ভালো আছেন। আবার হাজির হয়ে গেলাম আপনাদের সামনে নতুন একটি টিউটোরিয়াল নিয়ে। আজকে আপনাদের সামনে ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা প্রকাশ করার চেষ্টা করবো। আমরা সবাই জানি ডায়াবেটিস রোগের কোন কার্যকরী প্রতিষেধক নেই। কিন্তু প্রতিরোধ করার মাধ্যমে আপনি ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে খাদ্য তালিকা। এই কারণে আপনার খাদ্য তালিকা খুব ভালোভাবে অনুসরণ করতে হবে। কারণ এমন অনেক খাবার রয়েছে। যেগুলো খেলে আপনার ডায়াবেটিসের মাত্রা বেড়ে যাবে। আবার এমন কিছু খাবার রয়েছে। যেগুলো খেলে আপনার ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এই কারণে অবশ্যই ডায়াবেটিকস রোগীদের খাদ্য তালিকার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
Article Intro
ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা
আপনাদের আগেই বলেছি, ডায়াবেটিস রোগের প্রতিষেধক না থাকলেও আপনি খাবার তালিকার মাধ্যমে এই রোগটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।ডায়াবেটিকস রোগীর এমন কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। অর্থাৎ এ খাবার গুলো আপনাকে খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। চলুন দেখে নেই,ডায়াবেটিকস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা।
চিনি, মধু, গুড়, মিষ্টি, জ্যাম, জেলি, মিষ্টি পানীয়, মদ, দুধের সর, আইসক্রিম, কেক, পেস্ট্রি, মিষ্টি বিস্কুট, মিষ্টি দই, ঘি, ডালডা, চর্বিযুক্ত মাংস, কলিজা, গলদা চিংড়ি, মগজ, ভাজা খাদ্য, পাকা কলা, খেজুর, কিশমিশ, আঙুর, আখের রস।
আপনি যদি একজন ডায়াবেটিস রোগী হয়ে থাকেন। তাহলে উপরোক্ত খাবার গুলো আপনাকে সম্পূর্ণরূপে পরিহার করতে হবে। আপনার খাদ্য তালিকা থেকে উপরোক্ত খাবার গুলো বাদ দিয়ে আপনি যদি জীবনযাপন করতে পারেন। তাহলে আশা করা যায় ইনশাল্লাহ আপনার ডায়াবেটিস অবশ্যই নিয়ন্ত্রনে থাকবে।
কি কি খাবার খেলে ডায়াবেটিস বাড়ে
ডায়াবেটিকস এমন একটি রোগ। যার প্রতিষেধক এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি। এই কারণে আপনাকে সব সময় ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণের রাখতে হবে। আপনি এখন প্রশ্ন করতে পারেন আমি কিভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখবো। প্রথমত আপনাকে কি কি খেলে ডায়াবেটিস বাড়ে সে খাবারগুলো সম্পর্কে জানতে হবে।
তারপর যে খাবারগুলো গ্রহণ করলে আপনার ডায়াবেটিস বেড়ে যায়, সে খাবার গুলো পরিহার করতে হবে। এছাড়াও এর পাশাপাশি যে খাবারগুলো খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সে খাবারগুলো আপনাকে গ্রহণ করতে হবে। তাহলে দেখবেন আপনার ডায়াবেটিস কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য গরুর মাংস ও উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার ক্ষতিকর। তাই আপনাকে গরুর মাংস পরিহার করতে হবে। কিশমিশ উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খাবার। যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়াও আপনাকে সকল প্রকার মিষ্টি জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে। মিষ্টি জাতীয় খাবার খেলে দ্রুত ডায়াবেটিস বেড়ে যায়।
এছাড়াও আম, আনারস, আঙ্গুর, কলা,সাবেদা ও তরমুজ খেলে রক্তের গ্লুকোজ এর মাত্রা বেড়ে যায়। যখন আপনার রক্তে গ্লুকোজের সংখ্যা বেড়ে যাবে। তখন কিন্তু ডায়াবেটিসের মাত্রাও বেড়ে যাবে। এই কারণে আপনাকে সমস্ত খাবার থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে। মোট কথা আপনি যদি ডায়াবেটিকস থেকে মুক্তি পেতে চান। তাহলে অবশ্যই আপনাকে নিয়মমাফিক খাবার গ্রহণ করতে হবে।
দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায়
যেহেতু ডায়াবেটিস রোগের কোন প্রতিষেধক নেই। এই কারণে আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে হবে। দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আপনাকে উপরোক্ত খাবার গুলো প্রথমে পরিহার করতে হবে। অর্থাৎ ডায়াবেটিস নিষিদ্ধ খাবার গুলো সম্পূর্ণরূপে আপনাকে খাবার তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। তারপর আপনাকে ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণের কথা ভাবতে হবে।
এখন ধরুন আপনি ডায়াবেটিকস নিষিদ্ধ খাবার তালিকা সম্পূর্ণরূপে পরিহার করেছেন। এখন আপনার ডায়াবেটিস ৫০% হলেও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আবার আপনি যদি সম্পূর্ণরূপে ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণ করতে চান। তাহলে অবশ্যই এমন কিছু খাবার সেবন করতে হবে। যেকোনো গ্রহণ করলে আপনার রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমে যাবে। চলুন দেখে নেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে এমন কিছু খাবার ও নিয়ম কানুন।
প্রচুর হাঁটাহাঁটি করা
ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সর্বপ্রথম আপনাকে প্রচুর পরিমাণ হাঁটাহাঁটি করতে হবে। আপনার যদি হাঁটার অভ্যাস না থাকে। তাহলে কখনোই আপনার ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে থাকবেনা। এই কারণে আপনাকে প্রথম প্রতিদিন সকালে সর্বনিম্ন ৪০ মিনিট হাঁটতে হবে। হাঁটার পাশাপাশি আপনি যদি অন্যান্য ব্যায়াম করতে পারেন। তাহলে আপনার ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে আসবে। এই কারণে প্রতিদিন সর্বনিম্ন নিয়ম করে ৪০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করুন।
ফাস্টফুড পরিহার করা
ডায়াবেটিকস রোগীদের অবশ্যই বাইরের খাবার পরিহার করতে হবে। আমরা সবাই মুখরোচক খাবার গুলো খুবই পছন্দ করি। এরমধ্যে অন্যতম খাবার হলো ফাস্টফুড। ফ্রাইস, পিজ্জা, বার্গারের মতো প্রক্রিয়াজাত খাবার খেলে স্থূলতা, উচ্চ কোলেস্টেরল, হজমে সমস্যা ও হৃদরোগের মতো নানা রোগ দেখা দিতে পারে। এসব খাবার দেহে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে ডাইবেটিসের মাত্রা বেড়ে যায়।
ওজন স্বাভাবিক রাখা
আপনার দেহের ওজন যত বেশি হবে রোগবালাই হয় সম্ভাবনা ততো বেশি থাকে। এ কারণে অবশ্যই দেহের ওজন স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করবেন। দেহের ওজন স্বাভাবিক রাখার জন্য প্রতিদিন ব্যায়াম করতে হবে। এর পাশাপাশি ফ্যাট ও চর্বি জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে।
পাকা পেঁপে
আপনি যদি দ্রুত সময় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে চান তাহলে প্রতিদিন পাকা পেঁপে খেতে পারেন। পেঁপে মানবদেহের প্রতিক্রিয়াশীল প্রোটিন ‘সি’ ও ইউরিক অ্যাসিড কমাতে ইতিবাচক সাহায্য করে। যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি উপাদান।
সালাদ খাওয়া
আপনার যদি ডায়াবেটিসের মাত্রা বেড়ে যায় তাহলে প্রতিদিন একবাটি সালাদ খেতে পারেন। সালাদের মধ্যে থাকবে গাজর, শসা, লেটুস, টমেটো, পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি। প্রতিদিন দুপুরে বা রাতে ভারী খাবার খাওয়ার আগে এই সালাদ খেতে পারেন। এছাড়াও সালাদে এক চা চামচ ভিনেগারও যুক্ত করতে পারেন। ভিনেগার রক্তকে কমমাত্রায় সুগার শোষণে সহায়তা করে। আর রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও কমবে।
কফি পান করুন
প্রতিদিন সর্বনিম্ন দুই কাপ কফি পান করলে টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে আসে ৩০ শতাংশ। তবে চিনি ছাড়া কফি পান করতে হবে। আপনি যদি চিনি দিয়ে কফি খান তাহলে বিপরীত হতে পারে। এই কারণে অবশ্যই চিনি ছাড়া কফি খাবেন। এর পাশাপাশি সবুজ চা খেতে পারেন। ডায়াবেটিকস রোগীদের জন্য শুভেচ্ছা অত্যন্ত কার্যকারী।
নিয়মিত মেথি খান
মেথি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে,গ্লুকোজ সহনশীলতা উন্নত করতে ও রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করতে সাহায্য করে। এছাড়াও মেথি খেলে হজম শক্তি হ্রাস হয়, যাতে রক্তে সুগার সঠিকভাবে শুষে যায়। এটি টাইপ ১ ও টাইপ ২ ডায়াবেটিস উভয়ই নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ঘরোয়া উপায় হিসাবে ২ চা চামচ মেথি বীজ সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন ও প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মেথির সেই পানি পান করুন। দেখবেন কয়েক সপ্তাহ মেথি খাওয়ার ফলে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
ডুমুর খেতে পারেন
পুষ্টিবিদরা মনে করেন,ডায়াবেটিস রোগীদের উপর দারুণ প্রভাব ফেলে ডুমুর। ডুমুরের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ রিসার্চ ইন ফার্মেসি অ্যান্ড বায়োসায়েন্সে প্রকাশিত একটি গবেষণায় অনুযায়ী, ডুমুরে হাইপোগ্লাইসেমিক উপাদান রয়েছে, যা ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে পারে। এই কারণে আপনি যদি নিয়মিত ডুমুর ফল খান। তাহলে ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
উপসংহার
আজকে আমরা জানলাম ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা সম্পর্কে। এছাড়াও কিভাবে আপনি দ্রুত সময়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে করবেন, সেই সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। যেহেতু ডায়াবেটিকস রোগের কোন প্রতিষেধক এখনো আবিষ্কার হয়নি। এই কারণে আপনাকে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য অবশ্যই আপনাকে খাদ্য তালিকা অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করতে হবে। আপনি যদি উপরোক্ত আমাদের খাদ্য তালিকা অনুসরণ করেন। তাহলে ইনশাল্লাহ আপনার ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে আসবে।