কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
আমাদের মানব জীবনে আপনি যত গুলো রোগ দেখতে পারবেন। তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রোগের নাম হল, কিডনির সমস্যা। কারণ যখন কোন একটি ব্যক্তির কিডনির সমস্যা হয়। তখন সেই ব্যক্তির জীবনে অন্ধকার নেমে আসে। কারণ কোন একজন ব্যক্তির কিডনির সমস্যা হলে। সেই ব্যক্তির পরবর্তী সময়ে আরো বিভিন্ন রকমের রোগের সূচনা হয়। এবং দুঃখজনক হলেও সত্য যে, একটা সময়ে যখন সেই কিডনির সমস্যা অতিরিক্ত পরিমাণে বেড়ে যায়। তখন সেই ব্যক্তি টি মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়। কেননা যদি কিডনি একবারে অকার্যকর হয়ে পড়ে। তাহলে সেই ব্যক্তির মৃত্যু একেবারে সুনিশ্চিত হয়ে যায়।
তবে ভালো লাগার মতো বিষয় হলো যে, আপনার যদি পূর্বে থেকেই কিডনি রোগের লক্ষণ। এবং কিডনি রোগ হলে তার প্রতিকার কি কি সে সম্পর্কে ধারণা থাকে। তাহলে আপনি অনেকটা সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবেন। আর সে কারণেই আমাদের প্রত্যেকটা মানুষের এই কিডনি রোগের লক্ষণ গুলো জেনে নেওয়া উচিত। এর পাশাপাশি যদি আপনি কোন একজন ব্যক্তির মধ্যে এই কিডনি রোগের লক্ষণ গুলো দেখতে পান। তাহলে তার প্রতিকার কি কি, সে সম্পর্কে আমাদের প্রত্যেকের ধারণা রাখা উচিত।
আর সেই ধারণা দেয়ার জন্যই মূলত আজকের এই আর্টিকেল টি লেখা হয়েছে। কারণ আজকে এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমি আপনাকে জানিয়ে দেয়ার চেষ্টা করব যে। কিডনি রোগের লক্ষণ গুলো কি কি এবং কোন একজন ব্যক্তির মধ্যে যদি কিডনি রোগের লক্ষণ গুলো দেখা যায়। তাহলে কিভাবে প্রতিকার নেয়া যাবে। তার প্রত্যেক টি বিষয় নিয়ে আজকে ধাপে ধাপে আলোচনা করব। তাই অবশ্যই আপনি আজকের গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল টি মনোযোগ দিয়ে পড়ার চেষ্টা করবেন।
Article Intro
কিডনি রোগ কি?
সবার আগে আপনাকে জানতে হবে যে, এই কিডনি রোগ আসলে কি। তো আমরা সবাই জানি যে, আমাদের মানব দেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হল, কিডনি। যাকে আমাদের বাংলা ভাষায় বলা হয়ে থাকে, বৃক্ক। তো এই কিডনির মূল কাজ হলো আমাদের রক্তের মধ্যে যেসব দূষিত পদার্থ থাকে। সেই পদার্থ গুলো কে বের করে দেয়া।
এবং মানব দেহের ভেতর যদি কোন কারণে দূষিত পদার্থ থাকে। তাহলে সেই পদার্থ গুলো কে পরিশোধন করে মূত্র তৈরি করার মাধ্যমে দেহ থেকে বের করে দেয়া। তো কোনো কারণে যদি এই কিডনির সমস্যা হয়। তাহলে কিন্তু মানব দেহের মধ্যে এই পরিশোধিত কাজ গুলো সঠিক ভাবে সম্পন্ন হয় না। এবং যখন এই কাজ গুলো তে ব্যাঘাত ঘটে। তখন মূলত মানুষের কিডনিতে সমস্যা হয়।
কিডনি রোগের লক্ষণ গুলো কি কি?
উপরের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা থেকে আপনি জানতে পারলেন যে কিডনি রোগ কি। তো সেই আলোচনায় আমি আপনাকে স্পষ্ট করে বলেছি যে। আমাদের মানব দেহের জন্য কিডনি হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। এবং এই অঙ্গটা যদি কোন কারনে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তাহলে কিন্তু একটি মানুষ এর মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে যাবে। তবে এখন আপনাকে জেনে নিতে হবে যে। এই কিডনি রোগের লক্ষণ গুলো কি কি। অর্থাৎ আপনি আসলে কখন বুঝে নিবেন যে, কোন একজন ব্যক্তির দেহের ভেতরে থাকা কিডনির সমস্যা হয়েছে। চলুন এবার তাহলে সে সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জেনে নেওয়া যাক।
অবাক করার মত বিষয় হলো, যখন একজন ব্যক্তির মধ্যে কিডনির সমস্যা হয়। তখন শুরু থেকেই বুঝে ওঠা যায় না। বরং শুরুতেই আপনি খুব বেশি একটা লক্ষণ দেখতে পারবেন না। তবে পরবর্তী সময়ে যখন পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যায়। তখন মূলত এই লক্ষণ গুলো সবার সামনে প্রকাশিত হয়। আর এবার আমি সেই কিডনি রোগের লক্ষণ গুলো নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করব।
- একজন স্বাভাবিক ব্যক্তির কিডনি যেভাবে কাজ করে। সেভাবে কিডনি রোগের সমস্যা হলে, সেটি স্বাভাবিক ভাবে কাজ করতে অক্ষম হয়ে পড়ে।
- যখন কিডনির সমস্যা হবে, তখন সেই ব্যক্তির খাবারের রুচি ধীরে ধীরে কমতে থাকবে।
- সেই ব্যক্তির পূর্বে যে শরীরের ওজন ছিল। সেই ওজন আরো কমতে থাকবে।
- কিডনির সমস্যা হলে, সেই ব্যক্তির শরীরের বিভিন্ন অংশ ফুলতে থাকবে। যেমন কোন কারণ ছাড়াই হাত ফুলে উঠবে। অথবা কোনো কারণ ছাড়াই হাতে থাকা আঙুল গুলো ফুলে উঠবে।
- একজন স্বাভাবিক মানুষ দৈনিক যতবার প্রসাব করে। তার থেকে অনেক কম প্রসাব করবে, যখন সে ব্যক্তির মধ্যে কিডনির সমস্যা হবে।
- অনেক সময় দেখা যাবে, কিডনির সমস্যা হলে প্রসাব করার সময় রক্ত বের হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
- সে ব্যক্তি কাজ করুক আর না করুক, সবসময় তার মধ্যে একটা ক্লান্তি ভাব থাকবে। এবং কোন কিছু ঠিকমতো করতে পারবে না।
- যখন কিডনির সমস্যা হবে। তখন সেই ব্যক্তি পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে পারবে না। এতে করে তার শরীর আরো দুর্বল হয়ে পড়বে।
- অধিকাংশ সময় সেই ব্যক্তি নিজের শরীরের মধ্যে একটা অসুস্থতা বোধ করবে।
- এগুলোর পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন অংশে চুলকাতে থাকবে। যেমনটা এলার্জি হলে শরীরের নানা অংশে চুলকায়। ঠিক সেরকমই চুলকানি অনুভব করবে।
- সময় সময়ের অন্তর অন্তর উক্ত ব্যক্তি প্রচুর পরিমাণে মাথা ব্যথা অনুভব করবে।
মূলত এমন কিছু লক্ষণ রয়েছে, যে গুলোর মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন যে। কোনো একজন ব্যক্তির কিডনির রোগ হয়েছে কিনা। আর আপনি যাতে এই বিষয় টি খুব সহজেই বুঝতে পারেন। সেজন্য উপরে আমি কিডনি রোগের লক্ষণ গুলো নিয়ে পরিষ্কার ভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।
কিডনি রোগের প্রতিকার কি?
উপরের আলোচনা থেকে আপনি জানতে পেরেছেন যে, কিডনি রোগের লক্ষণ গুলো কি কি। তো এই বিষয় টি সম্পর্কে জানার পাশাপাশি এবার আমি আপনাকে কিডনি রোগের প্রতিকার গুলো সম্পর্কে জানিয়ে দেয়ার চেষ্টা করব। যাতে করে আপনি কোন একজন ব্যক্তির মধ্যে কিডনি রোগের লক্ষণ দেখার পরে। তার সঠিক প্রতিকার নিতে পারেন। আর এই কিডনি রোগের প্রতিকার গুলো হল:
- মূলত দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ হলে কিডনি ড্যামেজ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যদি এই আপনার এই ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। তাহলে আপনি তাৎক্ষণিক ভাবে অভিজ্ঞ ডক্তারের শরণাপন্ন হবেন।
- যদি আপনার শরীরের ওজন অতিরিক্ত পরিমাণে বেশি হয়। তাহলে আপনাকে সেই ওজন কমিয়ে আনার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
- যেসব ব্যক্তি নিয়মিত ধূমপান করেন। সেই ব্যক্তিদের অতি দ্রুত এই ধূমপানের অভ্যাস বাদ দিতে হবে।
- আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে লবণ খেতে ভালোবাসেন। তাহলে এই লবণের পরিমাণ অনেকটাই কমিয়ে আনার চেষ্টা করবেন। কারণ অতিরিক্ত লবণ খেলে কিডনির সমস্যা হয়ে থাকে।
- যাদের কিডনির সমস্যা আছে, তারা পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলমূল এবং শাকসবজি খাওয়ার চেষ্টা করবেন। তবে অবশ্যই অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ফলমূল এবং শাকসবজি খাবেন।
- আপনার শরীরের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে নাকি অবনতি হচ্ছে। তা অবশ্যই ডক্টর এর কাছে গিয়ে ঘন ঘন চেক করবেন।
উপরে আপনি যেসব কিডনি রোগের প্রতিকার দেখতে পাচ্ছেন। সে গুলো হলো কিডনি রোগের প্রাথমিক চিকিৎসার মত। কিন্তু আপনি যদি এই কিডনি রোগের লক্ষণ কোন ব্যক্তির মধ্যে দেখতে পান। তাহলে আপনি কোন ভাবেই দেরি করবেন না। বরং তাৎক্ষণিক ভাবে কোন অভিজ্ঞ ডাক্তারের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নেয়ার চেষ্টা করবেন।
কিডনি রোগ নিয়ে কিছু কথা
প্রিয় পাঠক, আমাদের মানব দেহের জন্য কিডনির সমস্যা হল নিরব ঘাতকের মত। মূলত যদি আপনার দেহের ভেতরে থাকা কিডনির রোগ হয়। তাহলে আপনি অতি দ্রুত ডক্টরের পরামর্শ নিবেন। এবং চিকিৎসা নেয়ার চেষ্টা করবেন।
নতুবা এই কিডনির অবস্থা যখন পুরোপুরি অবনতির দিকে ধাবিত হবে। তখন কিন্তু আপনার মৃত্যু নিশ্চিত হবে। তাই কিডনি সমস্যা হলে কখনোই অবহেলা করে সময় নষ্ট করবেন না। বরং দ্রুততার সাথে সঠিক চিকিৎসা নিবেন।